একটি বর্ষণমুখর দিন প্রবন্ধ রচনা | বর্ষণমুখর দিন বাংলা রচনা

একটি বর্ষণমুখর দিন: আজ সকালে ঘুম থেকে জেগেই দেখি সমস্ত আকাশ কালো মেঘে ভরে গিয়েছে। চারদিকে খোলাটে অন্ধকার । সারাটা দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় নি। যতদূর দৃষ্টি কেবল সজল-কাজল মেঘের আনোগোনা। দুপুর না গড়াতেই টাইপরাইটারের শব্দের মতো ঝাঁজালো বৃষ্টি নামল আমাদের টিনের চালে। 


বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির ধারাও যেন বেড়েই চলছে, থামাথামি নেই। ক্যালেন্ডারের দিকে তাকিয়ে দেখি, আজ শ্রাবণ মাসের দুই তারিখ। বর্ষার মাঝামাঝি, এ সময় তো বৃষ্টি হবেই । বিকেলের দিকে বৃষ্টির ধারা একটু হালকা হলেও সন্ধ্যার আগমুহূর্তে ঝুম ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। এই বর্ষণমুখর শ্রাবণসন্ধ্যায় অলস ভাবনায় কেটে যায় সময় ৷ 

একটি বর্ষণমুখর দিন প্রবন্ধ রচনা

একটি বর্ষণমুখর দিন

সামনে পরীক্ষা, টেবিলে বই, কিন্তু পড়ায় মন বসছে না। অবিরল ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। টিনের চালে যেন বর্ষাকন্যা নৃত্য করে চলছে। সেই একটানা বৃষ্টির নূপুর-নিকুণ আমাকে অন্য এক জগতে নিয়ে যায়। কবি রবীন্দ্রনাথ যেন এমন বর্ষণমুখর সন্ধ্যার কথা স্মরণ করেই লিখেছেন—

'আষাঢ় সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল, গেল রে দিন বয়ে

বাঁধন হারা বৃষ্টিধারা ঝরছে রয়ে রয়ে ।

একলা বসে ঘরের কোণে, কী ভাবি যে আপন মনে

সজল হাওয়া যূথীর বনে কী কথা যায় কয়ে।'


সব কাজ ফেলে আপন মনে প্রকৃতিকে দেখা আর কী এক আকুলতায় নিজেকে আচ্ছন্ন রাখা। হয়তো কবি না হলে বর্ষার দিনের এমন মুহূর্ত অন্তর দিয়ে অনুভব করা যায় না। এ সন্ধ্যায় মনটা যেন উতলা হয়ে উঠেছে। আমাকে অন্যমনস্ক করে তুলছে বৃষ্টির একটানা সুর । মনের ভেতর নানারকম ভাবনা ঢেউ খেলে যাচ্ছে। সে অনুভূতির কোনো স্পষ্ট রূপ নেই, নির্দিষ্ট কোনো নাম নেই।


রিমঝিম রিমঝিম বৃষ্টির একটানা শব্দ আজ মনকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। জানালার পাশে বসে বৃষ্টির শব্দ শুনছি। মাঝে মাঝে মেঘের গুরুগুরু গর্জন, গাছের ডালে বাতাসের ঝাপটা কানে বাজে। 


হঠাৎ বাজ পড়ার প্রচণ্ড শব্দে চমকে উঠি। আজ নিশ্চয় রাস্তায় জনমানব নেই। জানালা দিয়ে বাইরে তাকালাম। বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, অন্ধকারে ভালো করে কিছু দেখতে পেলাম না। হারিকেনের আলো একটু বাড়িয়ে দিলাম। তখনো ঝর ঝর করে অবিরল ধারায় বৃষ্টি ঝরছে। 

 

একবার ভেবেছি একাগ্রচিত্তে পরীক্ষার পড়া পড়ব কিন্তু বইয়ের পাতায় কিছুতেই মন বসছে না। মনের মধ্যে তত্ত্বকথা উকি দেয়। জীবনটাকে সফল করার দুর্বার সাধনায় নামতে হবে। জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তাও ভাবনায় আসে ।

 

ও ঘর থেকে মা ডাকছেন— ‘আয়, খোকা, নাশতা খেয়ে যা। ঘরে মোমবাতি নেই, এই-ই সম্বল।' অগত্যা উঠতে হলো। বাবা, আমি, টুম্পা, আর ছোটমামা মোমের আলোতে গরম গরম চা আর ঝালমুড়ি খেতে বসেছি। টুম্পা বলল, “মামা এই অন্ধকারে বৃষ্টির দিনে ভূতের গল্প ভালো জমবে। 

 

ভাত খেয়ে চল ভূতের গল্প শুনি।' আমিও বললাম, 'হ্যাঁ মামা ভূতের গল্প বল। ছোটমামা গল্প শুরু করলেন। কখনো ভূতের মতো নাকি সুরে, কখনো ফিসফিসে গলায়, জলদগম্ভীর কণ্ঠস্বরে পরিবেশ বেশ ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ভৌতিক ঘটনার বর্ণনা শুনে আমাদের গা ছমছম করে উঠল। 

 

টুম্পা ইতোমধ্যে কাঁথার আড়ালে মুখ লুকিয়ে ফেলেছে। গল্পের এক রোমাঞ্চকর মুহূর্তে হঠাৎ ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলে ওঠে। বাইরে তখনো তুমুল বৃষ্টি। নরম বিছানায় অলস ঘুমের মায়া কাটিয়ে আর কতক্ষণ দূরে থাকা যায় ।

 

বর্ষণমুখর সন্ধ্যা কেটে যায় । শ্রাবণের বৃষ্টির ধারা তখনো থামে না। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আমি একসময় ঘুমের আয়োজন করি। বর্ষার জলভাণ্ডব তখনো কানে বাজে। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখি, জলপরীরা নৃত্য করছে সারা আকাশ জুড়ে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url