বাংলাদেশের সামাজিক উৎসব প্রবন্ধ রচনা | বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব

বাঙালি জাতির সঙ্গে বিভিন্ন উৎসব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বাঙালির একঘেয়ে দুঃখ-দুর্দশাজর্জরিত জীবনের আনন্দের ছোঁয়া নিয়ে বিভিন্ন উৎসব। সবাই তখন দুঃখ ও হতাশার গ্লানি ভুলে মেতে ওঠে অনাবিল আনন্দে । এ উৎসবগুলো বাঙালির সমৃদ্ধ সংস্কৃতির পরিচয় বহন করে। 

বাংলাদেশের সামাজিক উৎস

বাংলাদেশের সামাজিক উৎস

বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের বাস এ বাংলাদেশ। এদেশের উৎসবের ধরন ও প্রকৃতিও তাই বৈচিত্র্যময় । উৎসবের রকমফের ঃ বাঙালির উৎসবের রকম ও প্রকৃতি ভিন্ন। এদেশে বিভিন্ন ধর্মের লোক বাস করে। ধর্ম অনুযায়ী উৎসবের ভিন্নতা ও প্রাচুর্য লক্ষণীয়। 


এ ছাড়া ষড়ঋতুর এদেশে প্রকৃতির রূপের ভিন্নতার বার্তা নিয়ে আসে উৎসবের আমেজ। বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের পরিচয় মেলে বাঙালির সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে। বাঙালির চেনার প্রকাশ ঘটে এদেশ গঠনে, যাদের অবদান আছে জাতীয় উৎসবের মাধ্যমে তাদের স্মরণ করার মাধ্যমে। বাঙালির উৎসবগুলো চার রকমের, যেমন- ১। ঋতুভিত্তিক, ২। ধর্মীয়, ৩। সামাজিক, ৪। জাতীয় উৎসব। 


ঋতুভিত্তিক উৎসব ঃ বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি তার রূপ পাল্টায়। কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সংস্কৃতিতে প্রকৃতির এ রূপ পরিবর্তন আনে উৎসবের বার্তা। বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। এদিনে বাঙালি তার পুরানো বছরের সব গ্লানি ভুলে নতুনভাবে জীবনকে শুরু করার উদ্যোগ নেয়। তৈরি করে হালখাতা। 


এ উপলক্ষ্যে পান্তা-ইলিশ ও মিষ্টি দ্বারা আপ্যায়ন করা হয় অতিথিদের। এ ছাড়া আছে চৈত্র সংক্রান্তি, পহেলা ফাল্গুন, হেমন্তের নবান্ন উৎসব, পৌষের পিঠা খাওয়ার উৎসব, শারদীয় উৎসব, বসন্তে দোল খেলার উৎসব। এভাবে প্রতিটি ঋতু একটি অলাদা উৎসব নিয়ে আসে বাঙালির জীবনে, আর বাঙালি তা পালন করে, মেলার আয়োজন করে ও পিঠাপুলি তৈরি করে।


ধর্মীয় উৎসব ঃ বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ। তাই ধর্মীয় উৎসবের কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসবের কথা। মুসলমানদের বছরে দুটি ঈদ— একটি ঈদুল ফিতর এবং অন্যটি ঈদুল আজহা। ঈদুল ফিতরে মুসলমানরা ভেদাভেদ ভুলে ধনী-গরিব সবাই একত্রে একই আনন্দে শরিক হয়। 


ঈদুল আজহা মুসলমানদের আত্মত্যাগ করতে শেখায়, অর্থাৎ মুসলমানদের কাছে আনন্দের আর এক প্রতিশব্দ ঈদ। এ ছাড়া আছে শবেকদর, শবেবরাত, শবেমেরাজ, আখেরি চাহার সোম্বা, মহরম, ঈদে মিলাদুন্নবি বা সিরাতুন্নবি (স), আশুরা ইত্যাদি। মুসলমানদের পরেই আসে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের কথা। 


বছরের প্রতিটি মাসেই তাদের কোনো না কোনো লৌকিক দেবতার পূজা থাকে। এ সমস্ত ধর্মোৎসবের ভেতরে দুর্গাপূজাই সর্বশ্রেষ্ঠ । দুর্গাপূজার পর আসে লক্ষ্মী পূজা, তার পর একে একে আসে কালীপূজা, জগদ্ধাত্রি পূজা, সরস্বতী পূজা। 


ঢাকঢোল, কাঁসা, শঙ্ক, উলুর ধ্বনিতে আলোড়িত হয়ে ওঠে পুজোপ্রাঙ্গণ। অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসবের মাঝে আছে বৌদ্ধপূর্ণিমা, প্রবারণা পূজা, মাঘী পূর্ণিমা ইত্যাদি। এ ছাড়া খ্রিষ্টানদের আছে বড়দিন, ইস্টার সানডে, গুড ফ্রাইডে, হেলোইন ইত্যাদি উৎসব।


সামাজিক উৎসব ঃ বাংলাদেশের সামাজিক উৎসবগুলোর মধ্যে বিবাহই শ্রেষ্ঠ উৎসব। গায়ে হলুদ থেকে শুধু করে রং খেলা, রাত জেগে গান-বাজনা করা, উপহার সামগ্রীর আদান-প্রদান প্রভৃতি দ্বারা বিবাহকালীন উৎসব পালিত হয়। এক সম্প্রদায়ের বিয়েতে অন্য সম্প্রদায়ের সরব ও স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি এ উৎসবকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে

 

এ ছাড়া বৌভাতের অনুষ্ঠান, জন্মদিন, আকিকা, বিবাহ বার্ষিকী, ভাইফোঁটা, জামাইষষ্ঠী, খাতনা প্রভৃতি সামাজিক উৎস হিসেবে চিহ্নিত। এসব উৎসব আমাদের যান্ত্রিক জীবনে আনে মানবীয় ও সজীব আনন্দের ছোঁয়া।


জাতীয় উৎসব ঃ বাঙালি জীবনের অন্যতম প্রধান অংশ হিসেবে গণ্য জাতীয় উৎসবসমূহ। ২১-এ ফেব্রুয়ারি শহিদ দিবস ও আন্তর্জ মাতৃভাষা দিবস, ২৬-এ মার্চ স্বাধীনতা দিবস ও ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস বাংলাদেশের জাতীয় উৎসবের পর্যায়ে পড়ে। 


উপসংহার ঃ 

যে-কোনো উৎসবই মানুষে-মানুষে মিলনের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের উৎসবসমূহের সর্বজনীনতা এসে বিস্ময়কর। যান্ত্রিক সভ্যতার এ সময়ে আমাদের সংস্কৃতির ধারক প্রত্যেকটি উৎসবকে সামগ্রিকভাবে অবশ্যই প্রাধান্য দিতে হবে



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url