খেলাধুলা শিক্ষার অঙ্গ প্রবন্ধ রচনা | খেলাধুলার গুরুত্ব রচনা

ভূমিকা : প্রবাদ আছে, 'স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।' শারীরিক সুস্থতাই মানসিক বলিষ্ঠতার উপায়-উপকরণ। শরীর ও মনের সুস্থতার ওপরই নির্ভর করে তার অনাগত দিনের সুখসমৃদ্ধি; নির্ভর করে তার ভবিষ্যৎ সাফল্যের সম্ভাবনা। খেলাধুলা শরীর-মন গঠনের এক অন্যতম উৎস। 


খেলাধুলা শিক্ষার অঙ্গ

খেলাধুলার মাধ্যমে মানুষ পেতে পারে নিরোগ দেহ, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু, সাহস-বিস্তৃত বক্ষপট ইত্যাদির মেলবন্ধন । খেলাধুলার মধ্যেই মানুষ খুঁজে পায় জীবন বিকাশের উন্মুক্ত বিশালতা, পায় জীবনসংগ্রামের দুর্জয় মনোভাব । 

 

খেলাধুলা শিক্ষার অঙ্গ

খেলাধুলা ও শৃঙ্খলা ঃ শৃঙ্খলাবোধ শুধু ব্যক্তির নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতির এক প্রধান হাতিয়ার। ক্রীড়াঙ্গনই শৃঙ্খলাবোধের সূতিকাগৃহ। এরই নিয়মিত অনুশীলনে মানুষ আয়ত্ত করে দেহমনে শৃঙ্খলা। জীবন সুস্থ ও সবল হয়ে ওঠে সমষ্টি চেতনার উন্মেষ ঘটে। 


দলগত ঐক্যবোধে অনুপ্রাণিত হয়। ব্যক্তির সংকল্প মিশে যায় সমষ্টির সংকল্পে । ব্যক্তিগত দুর্বলতা হারিয়ে যায় দলগত প্রচেষ্টার মধ্যে। গোটা দল সর্বশক্তি উজাড় করে জয়ের প্রত্যাশায় ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের উপর । একক নৈপুণ্য প্রদর্শন নয়, দলগত সংহতিই সেখানে প্রধান। আর এ দলগত শৃঙ্খলাবোধই জাতির অগ্রগতির অন্যতম ভিত্তি। সেজন্যেই প্রত্যেক সমাজ-রাষ্ট্রে খেলাধুলার এত কদর।


খেলাধুলা ও চরিত্র গঠন ঃ খেলাধুলা এক অনাবিল আনন্দের চিরন্তন উৎস। এ আনন্দের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে মানুষের শরীর, মন ও চরিত্র। সে চরিত্রই ভাবীকালের জীবনযুদ্ধের সফলতার প্রধান সোপান। খেলাধুলার মাধ্যমেই জীবনের আসে শৃঙ্খলাবোধ । 


খেলাধুলাই মানুষকে দেয় ভারসাম্যের শিক্ষা। খেলার মাঠের মতো জীবনের প্রাঙ্গণেও সাফল্যের জন্যে আছে প্রতিযোগিতা, আছে বিজয় উল্লাস ও পরাজয়ের গ্লানি, আছে শান্তচিত্তে তা মেনে নেওয়ার মানসিক ক্ষমতা। খেলার মাধ্যমেই সে সংগ্রহ করে জীবনে শিল্প আচরণের দীক্ষা। সংগ্রহ করে চারিত্রিক দৃঢ়তা, মানসিক বলিষ্ঠতা।


খেলাধুলা ও শিক্ষা ঃ শিক্ষা নিছক পরীক্ষা বৈতরণী উত্তরণের প্রতিশ্রুতি মাত্র নয়, রুজি রোজগারের উপকরণও নয়, নয় মানসিক ব্যায়ামের আখড়া। শিক্ষা সমগ্র জাতির অগ্রগতির উপায় উদ্ভাবন, মানুষের সুপ্ত প্রতিভার উন্মেষমন্ত্র। দেহ-মনের সুশৃঙ্খল সামঞ্জস্য বিধানেই আছে মানুষের পূর্ণতার সন্ধান। খেলাধুলার আনন্দ স্পর্শে দেহ-মন হয়ে ওঠে সজীব ও প্রাণময়। 


একদা শিক্ষার সঙ্গে ছিল খেলাধুলার অহিনকুল বিরোধ। খেলাধুলা ছিল উপেক্ষিত, নির্বাসিত। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় খেলাধুলা আর অনাদৃত নয় । শিক্ষা তাই সাবলীল স্বচ্ছন্দে জীবনপ্রবাহে উদ্ভাসিত। মুক্তির আনন্দে উচ্ছলিত। শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় সুস্থ জীবনবোধের উজ্জীবন, তবে খেলাধুলার গুরুত্ব সেখানে সর্বাধিক ।


খেলাধুলা ও জাতীয়তাবোধ ঃ খেলাধুলা জাতীয়তাবোধেরও জন্ম দেয়। জাতীয়তাবোধ প্রত্যেক দেশেরই এক অমূল্য সম্পদ । এ মহৎ অনুভবেই দেশের গৌরব, জাতির ললাটে জয়ের তিলক। একটি দল যখন ভিন্ন দেশের ভিন্ন দলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়, তখন সেই দলের সঙ্গে সেদেশের অগণিত মানুষের আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রামীচেতনা ও উজ্জ্বল আদর্শবোধ জাগ্রত থাকে । 


সে দল তখন কয়েকজন খেলোয়াড়ের সমষ্টিমাত্র নয়, সমগ্র দেশের অগণিত মানুষের প্রতিনিধি। সে দলও তখন সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে তখন সমগ্র দল যেন একপ্রাণ । জাতীয়তাবোধের চেতনা থাকে বলেই প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলো চারিত্রিক দৃঢ়তায়, অনমনীয় মনোভাবে, নিয়ম-শৃঙ্খলার অনুসরণে সংগ্রামী সংকল্পে হয়ে ওঠে দুর্জয়, ক্রীড়া নৈপুণ্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও অনুপম শিল্পশ্রীর স্মরণীয় আসর।


খেলাধুলা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ ঃ খেলাধুলা মানুষের মধ্যকার ব্যবধান ঘুচিয়েছে, পরকে আপন করেছে। এরই মাধ্যমে এক দেশ অন্য দেশে শুভেচ্ছার বার্তা পাঠিয়েছে, প্রীতির সম্পর্কে সুদৃঢ় করেছে। পারস্পরিক বুঝাপড়ার ক্ষেত্র হয়েছে প্রসারিত। খেলাধুলার মাধ্যমে উন্নত বিশ্ব ঠান্ডা লড়াইয়ের উগ্র প্রতিযোগিতা হ্রাস পেয়েছে। 


খেলাধুলা মানুষে মানুষে প্রীতির সেতুবন্ধন। খেলাধুলা বিশ্বভ্রাতৃত্ববোধ জাগরণের প্রধান উৎস। তা ভ্রাতৃত্ববোধ উন্মেষের প্রত্যক্ষ আনন্দ-আসর। জয়-পরাজয়ের হিসাবটা এখানে বড় নয়। প্রতিযোগিতার আন্তরিকতায়, উন্নতমানের ক্রীড়া-কৌশলে, হাজার ক্রীড়া প্রেমিকের মন জয় করে ক্রীড়াবিদরা। 


দর্শকরা মুগ্ধ হয়, প্রীতির হাত বাড়িয়ে দেয়, অকুণ্ঠ প্রশংসায় অভিনন্দিত করে। ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, টেবিল- টেনিস, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি কত না ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আসর বসে দেশে দেশে। এভাবে মানুষ সঞ্চয় করে ভ্রাতৃত্ববোধের এক মহৎ অভিজ্ঞতা, লাভ করে মনুষ্যত্বের দুর্লভ ঐশ্বর্য।


উপসংহার ঃ 

বর্তমানে আমাদের দেশেও সার্বিক প্রগতির জন্যে প্রয়োজন দেহ-মনের স্বাভাবিক পথ উন্মুক্ত করা । প্রয়োজন সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে খেলাধুলার অঙ্গনে নতুন প্রতিভার সাদর আমন্ত্রণ, পরিচর্যা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি। তবেই দেশ নবজাগ্রত চেতনায় আবার উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিরে পাবে তার হৃত গৌরব, পারবে সাফল্যের বিজয়মাল্য ছিনিয়ে আনতে ।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url