রেমিট্যান্স ও আমাদের সামাজিক জীবন প্রবন্ধ রচনা

রেমিট্যান্স ও আমাদের সামাজিক জীবন: প্রবাসীদের শ্রমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় দেশের অর্থনীতিতে প্রাণসঞ্চার হচ্ছে। রক্ষিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ভারসাম্য।

রেমিট্যান্স ও আমাদের সামাজিক জীবন প্রবন্ধ রচনা

সামাজিক জীবনেও রয়েছে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থের ইতিবাচক ভূমিকা। প্রবাসী শ্রমিক, রেমিট্যান্স ও বাংলাদেশের অর্থনীতি একই যোগসূত্রে গাঁথা। কারণ প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ বেকার সমস্যা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখছে।

রেমিট্যান্স ও আমাদের সামাজিক জীবন

রেমিট্যান্স : বিদেশে কর্মরত ব্যক্তিদের নিজ দেশে প্রেরিত অর্থকে বলা হয় রেমিট্যান্স। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত Migration and Development Brief শীর্ষক Update প্রতিবেদন ২০২০ অনুযায়ী, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম এবং দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণ দেশের জিডিপির ৬ শতাংশ এবং বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ২৮ শতাংশের বেশি।


রেমিট্যান্স ও দারিদ্র্য বিমোচন : দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে রেমিস্ট্যান্স অত্যন্ত ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে গ্রামীণ জনপদের কর্মীদের গড় আয় বৃদ্ধি পায়, প্রবাসী কর্মীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি করে এবং এ অর্থ তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করে শিক্ষা, চিকিৎসাসহ মানব উন্নয়নে অবদান রাখে। 


ব্যাপক পরিমাণে রেমিস্ট্যান্স প্রবাহের কারণে গ্রামীণ জনপদে আবাসস্থল তৈরি, বিভিন্ন ধরনের নির্মাণ কাজ, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অন্যান্য সেবা কার্যক্রমের সম্প্রসারণ ঘটায়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, দেশের গ্রামাঞ্চলে যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসীদের পরিবার পরিজন বসবাস করে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন তথা অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিট্যান্স প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অবদান রাখছে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা : বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৯০ লক্ষ কর্মী বিদেশে তাদের কাজের মাধ্যমে দক্ষতা ও মেধার স্বাক্ষর রাখছেন। 


বাংলাদেশের কর্মীরা এখন বিশ্বের ১৬০টি দেশে চাকরি নিয়ে যাচ্ছেন। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে দেশের বাইরে বিদ্যমান শ্রমবাজারগুলো ধরে রাখা এবং বিদেশে কর্মসংস্থানের জন্য নতুন নতুন শ্রমবাজারের অনুসন্ধান চালানো। সার্বিকভাবে বৈদেশিক কর্মসংস্থান ব্যবস্থাপনায় সরকারের বহুমুখী উদ্যোগের ফলে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি হচ্ছে, যা পূর্বের যে-কোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি।

 

বাংলাদেশের শ্রমবাজার : বিশ্বের প্রায় সব দেশেই বাংলাদেশের শ্রমশক্তি রয়েছে। 

প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি কাজের জন্য মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গমন করে থাকে। তবে বাংলাদেশের প্রবাসী জনশক্তির অধিকাংশই সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, কুয়েত, ওমান ও সিঙ্গাপুরে কর্মরত। 


এছাড়া বাহরাইন, লিবিয়া, কাতার, জর্ডান, লেবানন, ব্রুনাই, দক্ষিণ কোরিয়া, মরিশাস, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড ও ইতালিসহ অন্যান্য দেশেও বাংলাদেশি শ্রমশক্তি কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যেই রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার।


বাংলাদেশের রেমিট্যান্স চিত্র : ১৯৭৬ সালে সর্বপ্রথম জনশক্তি রফতানির মাধ্যমে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ শুরু হয়। ঐ বছর মোট রেমিট্যান্স প্রাপ্তির পরিমাণ ছিল ৩৫.৮৫ কোটি টাকা। এরপর প্রতিবছরই উত্থান-পতনের মধ্যদিয়ে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ তত এগিয়েছে। 

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০১৮ অনুযায়ী, ২০১৭-২০১৮ (জুলাই-মার্চ) অর্থবছরে দেশের রেমিট্যান্স প্রাপ্তির পরিমাণ ১০৬২৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রেমিট্যান্সের সিংহভাগ আসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহ থেকে। 


বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় কর্মরত প্রবাসীরা ৭৩০ কোটি ৭২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। ২০২০ সালে এর পরিমাণ প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার।

উপসংহার ঃ 

অতীতে জাতীয় উন্নয়নে অভিবাসন ও রেমিট্যান্সের গুরুত্ব নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আলোচনা হলেও বর্তমানে প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ তথা রেমিট্যান্সকে আর্থসামাজিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। 

 

প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ কিংবা রেমিট্যান্স হচ্ছে দেশের সামাজিক উন্নতির একটি প্রধান দৃশ্যমান ফলাফল। রেমিট্যান্স শুধু একজন প্রবাসী না, এটি জাতীয় উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণভাবে অবদান রাখে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্সের যথায একটি জাতির উন্নয়ন ধারায় বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url